ডাটা সায়েন্টিস্টের সিভি কেমন হওয়া চাই?
একটা ভালো সিভি জব পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক এগিয়ে রাখবে। সিভির কিছু অত্যবশকীয় অংশ নিচে দেয়া হলঃ
Title: এ অংশে আপনার নাম(বড় বোল্ড অক্ষরে) লিখবেন। নামের সাথে লিংকডিন, গিটহাব, ইমেইল ও দিতে পারেন।
Career objective: খুব ছোট করে এটি লিখবেন। কোথাও থেকে কপি করে না লিখে নিজে করার ট্রাই করবেন। যেমন; “My objective is to bring value to the organization I work for.” এই টাইফের কমন লেখাগুলো অবশ্যই বর্জনীয়।
Picture: বর্তমানে সিভিতে ছবি দেয়া না দেয়া অতটা গুরুত্বপুর্ন না। চাইলে ভাল দেখে একটা ভাল ফর্মাল ছবি দিতে পারেন।
Personal Information: এই অংশে পিতামাতা, বর্তমান/স্থায়ী ঠিকানা, ধর্ম, শখ ইত্যাদি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ৷
Experience: যাঁরা আগে কোথাও চাকরি বা ইন্টার্নশিপ করেছেন, তাঁদের সে সব উল্লেখ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পদের নাম, কোম্পানির নাম, কাজের মেয়াদ, কী দায়িত্ব ছিল ইত্যাদি অতি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার মতো এখানেও শেষ চাকরির কথা আগে লিখতে হবে।
Education: এটি টেবিল আকারে দিতে পারেন। আপনার সর্বশেষ শিক্ষা জিবনকে সবার আগে রাখার চেষ্টা করবেন। যেমন;
ডিগ্রির নাম (যেমন: B.Sc. in Computer Science)
কোর্স সময়কাল (যেমন: 2017–2021)
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামঃ(যেমন: নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)
ফলাফল(যেমন সিজিপিএ ৩.৫০)
Research & Publication: এখানে আপনার করা গবেষনা, থিসিস পেপার ইত্যাদির লিংক দিতে পারেন। আপনার কোনো ডাটা সায়েন্সে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা, পেপার, বা সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিবরণ উল্লেখ করুন। আপনার প্রধান ডাটা সায়েন্স প্রজেক্ট গুলি এবং অভিজ্ঞতাগুলির বর্ণনা দিন, সাথে সাথে প্রজেক্ট সাফল্য, ব্যবহার করা প্রযুক্তি, এবং আপনার ভূমিকা বর্ণনা দিন।
Skills: ডাটা সায়েন্স রিলেটেড স্কিল গুলো দিতে পারেন এ অংশে। অযথা অনেক গুলো স্কিল দেয়ার মানে বুঝায় আপনি কোনো টাতেই স্কিলড না। সুতরাং অপ্রয়োজনীয় লাইব্রেরী,প্রোগ্রামিং ভাষা দিয়ে এ অংশের মর্যাদা নষ্ট করবেন না। পাইথন, R, SQL, টেন্সরফ্লো, পাইটর্চ, সিকিট-লার্ন, হাদুপ, স্পার্ক ইত্যাদির মতো সায়েন্স টুলস এবং প্রোগ্রামিং ভাষার দক্ষতা উল্লেখ করুন। আপনার জানা যেকোনো গ্রাফিক্যাল প্রেজেন্টেশন টুল, যেমন Tableau, Power BI, এবং এমন কোনো অন্যান্য সফটওয়্যার উল্লেখ করুন।
Scholarship / Award: এখানে আপনি কি কি স্ক্লারশিপ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় জিবনে সেটা উল্লেখ করতে পারেন। যেমন ধরেন আপনি কোনো একটা মেশিন লার্নিং কনফারেন্স(IEEE/Springer) এ অংশ নিয়ে সেটাতে বেস্ট পেপার এওয়ার্ড পেয়েছেন সেটি উল্লেখ করতে পারেন।
সার্টিফিকেশন: ডাটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, বা প্রোগ্রামিং ভাষার সম্পর্কিত সার্টিফিকেশন উল্লেখ করুন। ডাটা সায়েন্সের সাথে সম্পর্কিত সার্টিফিকেট বা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করার মাধ্যমে আপনার দক্ষতায় বিশ্বাস দেখান। যেমন: Coursera, edX, এবং DataCamp এর কোর্স।
References: রেফারেন্সে আপনার ভার্সিটির প্রফেসর/সুপারভাইজারকে রাখতে পারেন। তবে আ ধুনিক সিভিতে রেফারেন্স বাধ্যতামুলক না। শিক্ষক, প্রাক্তন বা বর্তমান সহযোগী, বা পরিচিত প্রফেশনালের সুপারিশ আপনার সিভি মান বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
Signiture: এটি একদম শেষে থাকবে। স্বাক্ষর সাদা খাতায় লিখে স্কেন করে এর পর বেকগ্রাউন্ড রেমুভ করে দিতে পারেন। বেকগ্রাউন্ড রেমুভের জন্য এই টুলটা আমার প্রিয় সবসময়। Remove.bg.
নিচের জিনিসগুলো অবশ্যই ফলো করবেনঃ
১। সিভিতে ছোট খাটো স্কিল গুলো হাইলাইট না করাই ভালো। যেমন আপনি এম এস ওয়ার্ডে খুব এক্সপার্ট সেটা সিভিতে লেখার খুব একটা প্রয়োজন নেই।
২। আপনি যদি এম এস ওইয়ার্ড/ লেটেক্সে সিভি বানিয়ে থাকেন তবে সিভি লেখা শেষে অবশ্যই গ্রামারলি দিয়ে বানান/স্পেস ইত্যাদি চেক করে নিবেন।
৩। ফন্ট সাইজ, লাইন স্পেস, আন্ডারলাইন, বোল্ড এসব জিনিসগুলো স্মার্টলি হেন্ডেল করবেন।
৪। অনেকে সিভির ফাইল নেম টাই ঠিক ঠাক লেখে না। যেমন rajib.(1).pdf। এই টাইপের কমন ভুল গুলো করলে কোম্পানি আপনাকে খুব সহজে ফিল্টার করতে পারবে।
৫। সিভি সাবমিটের সময় অবশ্যই পিডিএফ ফাইলে সাবমিট করবেন। কোনোভাবেই ওইয়ার্ড ফাইল/ লেটেক্স কোড এসব সাবমিট করা যাবে না।
৬। সত্য বলতে আপনার সিভি তে নিয়োগ কমিটি শুরুতে ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় দেয় না। তাই অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র পরিহার করুন। আপনার সিভি সংক্ষেপে রাখার চেষ্টা করুন, সাধারণত ১ থেকে ২ পৃষ্ঠা আদর্শ। এর মাধ্যমে নিয়োগকর্তাদের সময় বাঁচানো এবং তাদের মূল তথ্যগুলি সহজে বোঝানো সম্ভব হবে।
৭। অনেকে দেখা যায় সিভির নামের সাথে গিটহাব, লিংকডিন, ক্যাগল একাউন্ট লিংক,পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট লিংক, ইমেইলের নাম একই হয় না। এটা মোটেও কাম্য নয়।
৮। নতুন্ দের জন্য ১ পেইজের সিভি ই যথেষ্ট। তবে সিভি ২/৩ পেইজের বেশি করা মোটেও উচিত নয়।
১০। অনলাইনে(Resume.io, Flowcv.io) /মোবাইল অ্যাপস/bdjobs/ইউটিউবের রেডিমেড ফরমেট সিভি কখনোই ভালো হতে পারে না।
১১। নকশা/ডিজাইন এসব সিভি তে না করাই উত্তম। সিভি হবে সিম্পল অফিশিয়াল।
১২। X-Y-Z ফর্মুলা ব্যবহার করতে পারেন।
যেমনঃ “Built a recommendation system (X) that helped to increase the revenue by 10% and improved the customer engagement (Y)on the platform by using Collaborative Filtering Algorithm (Z)”
১৩। আপনার সিভি নির্দিষ্ট চাকরি বিজ্ঞপ্তির জন্য কাস্টমাইজ করুন, যাতে আপনার সিভি ওই চাকরির দায়িত্ব এবং দক্ষতা প্রতি পূর্ণ হোক।
১৪। আপনার সিভি তে অপ্রয়োজনীয় একান্ত ব্যাক্তিগত জিনিস না দেয়াই ভাল।
১৫। মনে রাখবেন নিয়মিত চাকরি প্রার্থীদের থেকে আপনাকে বেছে নেওয়ার জন্য একটি ভাল বানান ও ভাষাজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ।
উপরের টিপস গুলো ফলো করে বানিয়ে ফেলেন আপনার স্মাট সিভি।